চট্টগ্রামের সিআরবি শিরিষ তলা মাঠে বৃক্ষমেলা শুরু

মিষ্টি কুমড়া

উপযুক্ত জমি ও মাটি তৈরীঃ

পলি মাটি, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আশ বা এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম। মিষ্টি কুমড়ার জন্য মাটির সর্বোত্তম অম্ল-ক্ষারত্ব-৫.৫-৬.৮।

জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে।

জমিতে চাষ করতে হলে বীজ বপন করার আগে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমির মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনাঃ

বীজ বপনের প্রায় ১০-১৫ দিন আগে প্রতিটি মাদা তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রতি গর্তে গোবর বা কমপোস্ট ৫ কেজি, ইউরিয়া ১৩০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমপি ১৫০ গ্রাম, জিপসাম ৯০ গ্রাম ও দস্তা সার ৫ গ্রাম দিতে হবে।
জৈব সার বীজ বোনার ১০ দিন পর প্রথমবার ও ৩৫ দিন পর দ্বিতীয়বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাদার চারপাশে অগভীর একটি নালা কেটে সার নালার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
***কাঁচা গোবর সরাসরি মাটির সাথে না মিশিয়ে মাটির উপরিভাগে দিয়ে রাখবেন, সরাসরি মিশিয়ে প্রয়োগে গাছ মারাও যেতে পারে।

জাত পরিচিতিঃ

লাল তীর সীড লিমিটেডের-

  • সুপ্রিমঃ
    রোপনের সময়ঃ আগস্ট-ফেব্র্বয়ারি
    ফসল তোলার মেয়াদঃ ৭৫-৮০ দিন।
  • সুইটি, ড্রিমগোল্ডঃ
  • রোপনের সময়ঃ ১২ মাস।
    ফসল তোলার মেয়াদঃ ৭৫-৮০ দিন।

চারা তৈরীঃ

বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুসারে বছরের যে কোনো সময় মিষ্টি কুমড়ার বীজ লাগানো যায়। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময় তবে বীজ উৎপাদনের জন্য নভেম্বরের মধ্যভাগে বীজ বপন করা উত্তম।

  • পলিব্যাগে চারা উৎপাদন
  • পলিব্যাগে মিষ্টি কুমড়ার চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৩X৪ ইঞ্চি (৮X১০(সে.মি) আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
  • অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত পলিব্যাগে ব্যবহার করতে হবে।
  • অতঃপর প্রতি ব্যাগে দুইটি করে বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ লাগিয়ে দিতে হবে।
  • বীজ গজানোর পর ১৫-১৬ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম।

 

সেচ ব্যবস্থা ও আগাছা দমনঃ

  • মিষ্টি কুমড়া গাছের বৃদ্ধি ও ভালো ফলন পেতে মাটিতে রস থাকার প্রয়োজন।
  • তাই শুষ্ক আবহাওয়ায় ৫-৬ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।
  • তবে ফল তোলার তিন সপ্তাহ আগেই সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
  • অপরদিকে সেচ বা বৃষ্টির পানি যাতে বেশি দিন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে চারা গাছের গোড়ায় কিছুটা মাটি তুলে দিতে হবে।
  • মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগবালাইঃ

মিষ্টি কুমড়ার মাছিপোকা

ক্ষতির ধরণঃ

  • এই পোকা মিষ্টি কুমড়ার কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে।
  • পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
  • এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ।
  • সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার
  • মাছির আক্রমণ থেকে ফসল রৰা করার জন্য বিষটোপ অত্যন্ত কার্যকর।

রেড পামকিন বিটল

ক্ষতির ধরণঃ

  • পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে।
  • এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে।
  • ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখা।

জাবপোকা

ক্ষতির ধরণঃ

  • জাবপোকার আক্রমণে মিষ্টি কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়।
  • মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়।
  • নিমবীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি সেপ্র করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
  • বন্ধু পোকাসমূহ সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়।

সাদা গুঁড়া রোগ বা পাউডারি মিলডিউ

ক্ষতির লক্ষণঃ

  • রোগের প্রারম্ভে গাছের নিচের বয়স্ক পাতায় রোগের লৰণ প্রকাশ পায়। ক্রমশ উপরের পাতায় রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
  • প্রথমে পাতার উপর বিক্ষিপ্ত সাদা সাদা দাগের সৃষ্টি হয়।
  • রোগ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দাগ আকারে বড় হতে থাকে এবং হলুদ বর্ণ থেকে বাদামী রঙ ধারণ করে।
  • রোগের প্রকোপ বেশি হলে গাছের লতা ও কান্ড আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে সেই লতা ও পরে পুরো গাছই মরে যেতে পারে।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাউ ও কুমড়াজাতীয় আগাছা বিনাশ করতে হবে।
  • জমির আশে-পাশে কুমড়া জাতীয় যে কোন সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা
  • আগাম চাষ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়।
  • প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইনসাফ/থিয়ভিট বা সালফোলাঙ/কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিঙিন ১৫ দিন পর পর সেপ্র করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা।

ডাউনি মিলডিউ

ক্ষতির লক্ষণঃ

  • এই রোগ শুধু পাতায় হয়। আক্রান্ত পাতায় নানা আকারের দাগ পড়ে। সাধারণত দাগগুলি কোণাকৃতি ও হলদে হয়।
  • দাগগুলি খুব তাড়াতাড়ি সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় ও আকারে বড়ো হয়। পাতার নিচে দিকে দাগের উপরে বেগুনি রংয়ের ছত্রাক জন্মে।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাউ ও কুমড়াজাতীয় আগাছা বিনাশ করতে হবে।
  • জমির আশেপাশে কুমড়া জাতীয় যে কোনো সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা।
  • আগাম চাষ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়।

জৈব কীটনাশক

  • পোকাখাওয়া পাতা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া পাতা সবগুলোই কেটে ফেলে দিতে হবে
  • পিপঁড়া, উরচুঙ্গা, উইপোকা এবং পাতাছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হয়।
  • গাছের পাতায় পোকা ধরলে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে সেটি হল পোকাখাওয়া পাতাগুলোকে কেটে ফেলে দিতে হবে
  • ভিনেগার ও তরল সাবান দিয়ে তৈরি জৈব কীটনাশক
  • নিম জৈব কীটনাশক তৈরি করতে পারেন