চট্টগ্রামের সিআরবি শিরিষ তলা মাঠে বৃক্ষমেলা শুরু

হলুদ

ভূমিকা: হলুদ  একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত মসলা ফসল।  হলুদের রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ।
 

উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ সব ধরনের মাটিতে হলুদ চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য উত্তম।


বীজ বপন: চৈত্র মাস হলুদ চাষের উপযুক্ত সময়। হলুদ চাষের জন্য সাধারণত ১৫-২০ গ্রাম ওজনের ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ  লাগাতে হয়। ৫০ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে, ২৫ সে.মি. দূরে দূরে ৫-৭ সে.মি. গভীরে কন্দ লাগাতে হয়। প্রতি হেক্টরে আনুমানিক ২৫০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়। কন্দ লাগানোর পর অবশ্যই ভেলী করে দিতে হবে।

জাত পরিচিতিঃ ডিমলা ও সিন্দুরী নামে বাংলাদেশে দু’টি উন্নত জাত রয়েছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ৩ গুণ ফলন বেশী দেয়।

সার ব্যবস্থাপনাঃ জমির উর্বরতার উপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি হেক্টরে সারের পরিমাণ হলোঃ- গোবর ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি, জিপসাম ১০৫-১২০ কেজি ও জিংক সালফেট ২-৩ কেজি। জমি তৈরির সময় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এর পুরোটা ও ৮০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। কন্দ লাগানোর ৫০-৬০ দিন পর ভেলী হালকাভাবে কুপিয়ে, ১০০-১২০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে আবার ভেলী করে দিতে হয়। ১ম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তির এবং আরও ৫০-৬০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির সার প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির সংযোজিত সার হিসেবে প্রতি হেক্টরে প্রতিবারে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া ও ৪০-৪৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির সার সারির মাঝে প্রয়োগ করে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সামান্য সার মিশ্রিত মাটি ভেলীতে যোগ করে দিতে হবে।

পোকমাকড় ব্যবস্থাপনা:

পোকার নাম : ডগা ছিদ্রকারী পোকা
ভূমিকা : কান্ড আক্রমণ করে বলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলে উৎপাদন কম হয়।
পোকা চেনার উপায়: এ পোকার মথ (মা) কমলা হলুদ রংয়ের হয় এবং পাখার উপর কালো বর্ণের ফোটা থাকে। কীড়া হালকা বাদামী বর্ণের হয় এবং গায়ে সুক্ষ্ণ শুং থাকে।
ক্ষতির নমুনা : পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের দিকে খেতে থাকে, ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় ডেড-হার্ট লক্ষ্মণ দেখা দেয় এবং আক্রান্ত কান্ডে ছিদ্র ও কীড়ার মল দেখা যায়।

অনুকুল পরিবেশ : আদ্র আবহাওয়া। 
জীবন চক্র : স্ত্রী মথ পাতা বা গাছের নরম অংশে ডিম পাড়ে। ৭ দিনে ডিম থেকে কীড়া বের হয় এবং ২-৩ সপ্তাহ কীড়া অবস্থায় থাকে। পুত্তলি ধাপ সম্পন্ন করতে ১ সপ্তাহ লাগে।  এরা বছরে ৩ বার বংশ বিস্তার করে।
ব্যবস্থাপনা: আক্রান্ত ডগা তুলে ফেলা ও সম্ভব হলে পোকার কীড়া ধরে মেরে ফেলা। প্রতি লিটার পানিতে ৪ মি.গ্রা. হারে বিটি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অধিক আক্রমণে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

পোকার নাম : রাইজোম স্কেল পোকা
ভূমিকা: এ পোকা রাইজোম (হলুদ) আক্রমণ করে বলে ক্ষেতের আইল থেকে সহজে বুঝা যায় না। ফলে প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়।
পোকা চেনার উপায়: পূর্ণাঙ্গ পোকা উজ্জল হলুদ বর্ণের এবং শরীর গোলাকার। এদের শরীর মোমের মত স্কেল দ্ধারা   আবৃত থাকে।
ক্ষতির নমুনা: ফসলের শেষ পর্যায়ে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। পূর্নাঙ্গ ও নিম্ফ পোকা রাইজোমের রস চুষে খায় বলে রাইজোম আকারে ছোট হয়। রাইজোম কুঁচকে যায় ও অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমে যায়। আক্রান্ত রাইজোম গুদামে রাখলে সেখানে পচন ধরতে পারে।
অনুকুল পরিবেশ: আর্দ্র আবহাওয়া।
জীবন চক্র: স্ত্রী পোকা রাইজোমের উপর হলুদ রংয়ের ডিম পাড়ে। ৭-৮ দিনে ডিম থেকে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয়। ২৪ দিন পর নিম্ফ পূর্ণাঙ্গে পরিণত হয়।  এদের জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ৩১-৩৫ দিন সময় লাগে।  বছরে এরা ১০ বার বংশ বিস্তার করে।
ব্যবস্থাপনা: জুলাই- আগস্ট মাসে আক্রান্ত রাইজোম তুলে ধ্বংশ করতে হবে। পুরোপুরি আক্রান্ত রাইজোম বাদ দিয়ে গুদামজাত করতে হবে। মাঠে আক্রমণ দেখা দিলে গুদামে রাখার পূর্বে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
 

পোকার নাম : বিছা পোকা 
ভূমিকা: এ পোকার কীড়া ছোট অবস্থায় একত্রে থাকে ও বড় হলে পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে বিধায় প্রাথমিক অবস্থায় এদের দমন করা উচিৎ।
পোকা চেনার উপায়: এটি মথ জাতীয় পোকা এবং কীড়ার শরীর লোমে ঢাকা থাকে। কীড়াগুলো ক্ষতিকারক।
ক্ষতির নমুনা: এ পোকার আক্রমণ মাঝে মাঝে দেখা যায়। কীড়া পাতা ও গাছের নরম অংশ খায় । আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে পুরো গাছ পাতা বিহীন হয়।
অনুকুল পরিবেশ:  বিকল্প পোষক।
জীবন চক্র: স্ত্রী মথ ৪১২-১২৪১ টি ডিম পাড়ে। ৮-১৬ দিনে ডিম হতে কীড়া বের হয়। কীড়া ছোট অবস্থায় দলবদ্ধ থাকে কিন্তু বড় হলে পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে।  কীড়া অবস্থায়  ৪ সপ্তাহ থাকার পর পুত্তলিতে পরিণত হয়। ১-২ সপ্তাহ পুত্তলি অবস্থা কাটানোর পর পূর্ণাঙ্গ মথ বেরিয়ে আসে। মথ ১ সপ্তাহ বাঁচে।
ব্যবস্থাপনা: আলোর ফাঁদ দিয়ে মথ আকৃষ্ট করে মারা। কীড়া দলবদ্ধ থাকা কালীন সংগ্রহ করে হাত দিয়ে পিষে মারা। ক্ষেতের মাঝে কঞ্চি পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে মথ, কীড়া ইত্যাদি ধরে খায়। শিকারী গান্ধী  ও পরজীবী পোকা সংরক্ষণ। আক্রান্ত  ক্ষেতের  চারিদিকে নালা করে কেরোসিন মিশ্রিত পানি রাখলে কীড়াগুলো  ঐ পানিতে পড়ে মারা যায়। সময়মত আগাছা ও মরা পাতা পরিষ্কার করা।অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করা।

পোকার নাম: থ্রিপস
ভূমিকা: এ পোকা ছোট কিন্তু' পাতার রস চুষে খায় বিধায় গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। সে কারনে ক্ষেতের মধ্যে পাতা বিবর্ণ দেখালে কাছে গিয়ে মনোযোগ সহকারে দেখা উচিৎ , তা না হলে ফলন অনেক কমে যাবে।
পোকা চেনার উপায়: আকৃতিতে খুব ছোট । স্ত্রী পোকা সরু, হলুদাভ।  পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ গাঢ় বাদামী । বাচ্চা সাদা বা হলুদ । এদের পিঠের উপর লম্বা দাগ থাকে।
ক্ষতির নমুনা: এরা রস চুষে খায় বলে আক্রান্ত পাতা রূপালী রং ধারণ করে । আক্রান্ত পাতায় বাদামী দাগ বা ফোঁটা দেখা যায়। অধিক আক্রমণে পাতা শুকিয়ে যায় ও ঢলে পড়ে। রাইজোম আকারে ছোট ও বিকৃত হয়।
অনুকুল পরিবেশ:  বিকল্প পোষক।
জীবন চক্র: স্ত্রী পোকা পাতার কোষের মধ্যে ৪৫-৫০ টি ডিম পাড়ে। ৫-১০ দিনে ডিম হতে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয়। নিম্ফ ১৫-৩০ দিনে দুটি ধাপ অতিক্রম করে । প্রথম ধাপে খাদ্য গ্রহণ করে  এবং দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য গ্রহণ না করে মাটিতে থাকে । এরা বছরে ৮ বার বংশ বিস্তার করে। এবং স্ত্রী পোকা পুরুষ পোকার সাথে মিলন ছাড়াই বাচ্চা দিতে সক্ষম ।
ব্যবস্থাপনা: সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার। ক্ষেতের মাকড়সার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এ পোকা দমন করা যায়। অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ সাধারণত লাগানোর ৯-১০ মাস পর পাতা শুকিয়ে গেলে হলুদ সংগ্রহ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ টন কাঁচা হলুদ পাওয়া যায়।

ব্যবহার: মসলা হিসেবে বিভিন্ন প্রকার রান্নার কাজে হলুদ ব্যবহার করা হয়। রুপ চর্চায়ও এর ব্যবহার রয়েছে।

ভেষজগুণঃ  
 > পাকস্থলীর গ্যাস নিবারণ করে;
 > মুত্রনালীর রোগ নিবারণ করে থাকে;
 > ক্ষত শুকাতে ও ব্যাথা নিবারণে ব্যবহৃত হয়।