ফুলকপি চাষ পদ্ধতি
মাটি তৈরি:
> ফুলকপি চাষ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাটি তৈরি।
> উর্বর দোআঁশ ও এঁটেল মাটি, যেখানে সাধারনত পানি জমে না এবং দিনের বেশিরভাগ সময়ই রোদ পাওয়া যায়, এমন জায়গা ফুলকপি চাষের জন্য উত্তম।
> মাটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে, পরিমাণ মতো জৈব সার যেমন- গোবর কম্পোস্ট, ছাই খৈল ইত্যাদি মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
> ঠান্ডা আবহাওয়া এবং আর্দ্র জলবায়ু ফুলকপি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস ফুলকপি বপনের উপযুক্ত সময়।
গাছের পরিচর্যা:
> গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য দু-সারির মাঝখান থেকে মাটি সরিয়ে নালা তৈরি করে দিতে হবে।
> প্রথম এক সপ্তাহ একদিন পরপরই সেচ দিতে হবে। এক সপ্তাহ পরে প্রয়োজন অনুযায়ী (জমি শুকিয়ে গেলে) সেচ দিলেই চলবে।
> স্যার প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই মাটি ভেঙ্গে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
> ফুলকপির রং সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থায় ফুলের চারপাশ থেকে পাতা টেনে বেঁধে দিতে হবে যাতে সূর্যের আলো সরাসরি ফুলে না পড়ে, তা না হলে ফুলের রং হলদেটে হয়ে যেতে পারে।
সার প্রয়োগ: (প্রতি শতক জমির জন্য সারের পরিমাণ নিম্নরূপ)
> ইউরিয়া সার: ১ কেজির একটু বেশি (১.১ বা ১.২ কেজি)
> টিএসপি: ৬০০ - ৮০০ গ্রাম
> এমওপি: ৮০০ গ্রাম - ১ কেজি
> বোরাক্স: ৩০ - ৪০ গ্রাম
> গোবর: ৬০ - ৮০ কেজি
জাত ও চাষের মৌসুম: বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক জাতের ফুলকপি চাষ হয়। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে শীতকালে আগাম মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি চাষ করা হয়। এছাড়া গ্রীষ্মকালে চাষের জন্যও আলাদা জাত রয়েছে, যেমন আমাদের দেশে মাঘী, অগ্রহায়ণী, পৌষালী, বারি ফুলকপি- ১ ও ২ ইত্যাদি জাতের ফুলকপি চাষ করা হয়।
আগাম জাত:
> সময়: শ্রাবন-ভাদ্র
> জাত: অগ্রহায়ণী, সুপার স্নোবল ও হাইব্রিড
মধ্যম জাত:
> সময়: ভাদ্র-আশ্বিন
> জাত: পৌষালী, রাক্ষুসী স্নোবল, স্নোবল ওয়াই, হোয়াইট টপ
নাবী জাত:
> সময় : আশ্বিন-কার্তিক
> জাত: মাঘী বেনারসী, ইউনিক স্নোবল, হোয়াইট মাউন্টেন ও হাইব্রিড
পোকামাকড় ও রোগ:
> ফুলকপির সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো মাথা খেকো লেদা পোকা, যা গাছের কচি পাতা ও ডগা খেয়ে ফেলে।
> এছাড়া নাবী জাতে- সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে।
> ফুলকপির প্রধান সমস্যা হল পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ। এছাড়া চারা ধ্বসা, গদাই মূল, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে।
> বোরন সারের অভাবে ফুলে বাদামী দাগ ও কাণ্ড ফাঁপা হয়ে যেতে পারে।
দমন পদ্ধতি:
> প্রতি ৫০ গ্যালন পানির সাথে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রামের মতো ক্যালোমেল মিশিয়ে গাছে ছিটানো যেতে পারে।
> লেদা পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কীটনাশক ছিটানো যেতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন বা যিথিওল স্পো ব্যবহার করা যেতে পারে।
জৈব পদ্ধতি:
> পরিমিত সেচ ও পর্যাপ্ত জৈব সার প্রদান করা ও পানি নিস্কাশনের ভালো ব্যবস্থা রাখা।
> রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
> সরিষার খৈল প্রতি হেক্ট্ররে ৩০০ কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে।
> জৈব বালাইনাশক ব্যবহার। যেমন- নিম পাতার রস, আতা গাছের পাতার রস, সাবানের গুড়া পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়।