চট্টগ্রামের সিআরবি শিরিষ তলা মাঠে বৃক্ষমেলা শুরু

লাউ

উপযুক্ত জমি ও মাটি তৈরীঃ

জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ, এঁটেল বা বেলে দো-আঁশ মাটির উঁচু জমি লাউ চাষের জন্য উত্তম।

যেহেতু এটেল মাটি পানি ধরে রাখে, তাই খরা মৌসুমে এটেল মাটিতে লাউয়ের চাষাবাদ ভাল হয়।

বাংলাদেশে শীতও বেশি না, গরমও বেশি না এমন আবহাওয়া লাউয়ের চাষাবাদের বেশি উপযোগী।

শীতকালটা লাউ চাষের জন্য উত্তম। তবে, শীতকালীন আগাম লাউয়ের চাষাবাদ জন্য ভাদ্রের প্রথমে এই সবজির চাষ করা ভাল।

 

লাউ চাষের জন্য জমি নির্বাচন করতে হবে সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন।

লাউ গাছের শিকড় ব্যাপক বৃদ্ধির জন্য উত্তমরূপে জমি ৩-৪ বার চাষ ও মাই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। যাতে সহজে শেকড় অনেক দুর যেতে পারে।

লাউয়ের চাশাবাদে গোবর বা জৈব সারের ব্যাপক ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

তবে এগুলো জমিতে চাষের আগে প্রয়োগ করে বেড তৈরি করা উত্তম। বেড তৈরি ও বেড থেকে বেডের দূরত্ -

বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি.।

বেডের প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে নিতে হবে।

এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে।

এরূপ পাশাপাশি ২টি বেড়ের মাঝখানে ৬০ সেমি. ব্যাসের সেচ নালা থাকবে।

এবং প্রতি ২ বেড অন্তর ৩০ সেমি প্রশস্ত শুধু নিকাশ নালা থাকবে।

সার ব্যবস্থাপনাঃ

প্রতি মাদায় ২০০ গ্রাম টিএসপি + ১০০ গ্রাম জিপসাম + ৫০ গ্রাম এমওপি + (জিংক, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বোফুরান ১৫-২০ গ্রাম হারে দেয়া যায়)। আর বেশি বেশি গোবর বা জৈব সার দিলে অতি উত্তম।

অথবা

২ ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গোবর, ১০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০ গ্রাম পটাশ সার মিশ্রিত করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১২-১৫ দিন

জাত পরিচিতিঃ

  • হাইব্রিড বিইউ লাউ-১

অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত। আলোক অসংবেদনশীল এই জাত প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়।

  • বিইউ লাউ-১(ওপি)

দেশি জাত হওয়ায় এইজাতের লাউয়ের আকার ছোট হযে থাকে।

  • সীতা লাউ-১

বর্তমানে অধিক ফলনশীল এবং অনেক বছর ধরে এক টানা ফল দেয়া কদুর জাত হল সীতা লাউ-১। এই জাতটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। এজাতের গাছ একবার রোপণ করার পর টানা ১০-১৫ বছর একটানা ফল দিয়ে থাকে।

  • হাইব্রিড লাউ : ডায়না এফ-১

বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান : লালতীর

বৈশিষ্ট্য : উচ্চফলনশীল জাত, দ্রুত বৃদ্ধি হয়, অধিক ফল ধারণক্ষম হাইব্রিড জাতের লাউ।

  • হাইব্রিড লাউ : বর্ষা

বর্ষা জাতের ফলন গাঢ় সবুজ রঙের , খেতে সুস্বাদু এবং বর্ষা মৌসুমেও ভাল ফলন পাওয়া যায়।

চারা তৈরীঃ

আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য অক্টোবরের শেষ দিকে বীজ বোনা উত্তম।

বীজবাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং সবল সতেজ চারা উৎপাদনের জন্য বীজ শোধন জরুরি।

লাউয়ের বীজের খোসা কিছুটা শক্ত। তাই সহজ অংকুরোদগমের জন্য শুধু পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা ১% পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে এক রাত ভিজিয়ে অতপর পলিব্যাগে বুনতে হবে।

সেচ ব্যবস্থা ও আগাছা দমনঃ

লাউ ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। প্রয়োজনীয় পানির অভার হলে ফল ধারণ ব্যাহত হবে এবং ফল আস্তে আস্তে ঝরে যাবে। কাজেই সেচনালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। লাউয়ের জমিতে কখনো সব জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুধুমাত্র সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। শুষ্ক মৌসুমে লাউ ফসলে ৪/৫ দিন অন্তর সেজ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির ঘাস লাউতে বোটল গোর্ড মোজাইক ভাইরাস নামে যে রোগ হয় তার হোস্ট। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়াও গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়।

গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলো গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি. পর্যন্ত ডালপালাগুলো ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগবালাইঃ

লাউয়ের মাছি পোকা

এ পোকা লাউয়ের ফলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে, পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতরে খেয়ে নষ্ট করে ফেলে।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

মাছি পোকর কীড়া আক্রান্ত ফল দ্রুত পচে যায় এবং গাছ হবে মাটিতে ঝরে পড়ে। পোকা আক্রান্ত ফল কোনোক্রমেই জমির আশেপাশে ফেলে রাখা উচিত নয়। পোকা আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেললে মাছি পোকার বংশবৃদ্ধি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

কিউলিওর নামক সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে মাছিপোকর পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। পানি ফাঁদের মাধ্যমে ওই ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট মাছি পোকাগুলোকে মেরে ফেলা যায়।

 

পামকিন বিটলঃ

পামকিন বিটলের পূর্ণ বয়স্ক পোকা চারাগাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খেতে খেতে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে এবং বয়স্ক গাছের পাতার শিরা উপশিরা গুলো রেখে সম্পূর্ণ সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে। এদের কীড়া শিকড় বা মাটির নিচে থাকা কা- ছিদ্র করে ফলে গাছ ঢলে পড়ে এবং পরিশেষে শুকিয়ে মারা যায়।

দমন ব্যবস্থাপনাঃ

  • চারা অবস্থায আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে।
  • ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে চারাগুলো বেঁচে যায়।

মোজাইকঃ

চারা অবস্থায় বীজ গজানোর পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে। বযস্ক গাছের পাতায় হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইকের মতো দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের। দ্রুত বড় হয়। আক্রান্ত পাতা ছোট, বিকৃত ও নিচের দিকে কোকড়ানো, বিবর্ণ হয়ে যায়। শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। ফুল কম আসে এবং অধিক আক্রমণে পাতা ও গাছ মরে যায়।

দমন ব্যবস্থাঃ

  • আক্রান্ত গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা। ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার রাখা।
  • ক্ষেতে বাহক পোকা উপস্থিতি দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে তা দমন করা।
  • রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোনো বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।

জৈব কীটনাশকঃ

  • পোকাখাওয়া পাতা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া পাতা সবগুলোই কেটে ফেলে দিতে হবে
  • পিপঁড়া, উরচুঙ্গা, উইপোকা এবং পাতাছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হয়।
  • গাছের পাতায় পোকা ধরলে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে সেটি হল পোকাখাওয়া পাতাগুলোকে কেটে ফেলে দিতে হবে।
  • ভিনেগার ও তরল সাবান দিয়ে তৈরি জৈব কীটনাশক।
  • নিম জৈব কীটনাশক তৈরি করতে পারেন।