চট্টগ্রামের সিআরবি শিরিষ তলা মাঠে বৃক্ষমেলা শুরু

এলাচ বা এলাচি

এলাচ বা এলাচি মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। সব ধরনের খাবারেই এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাই এর দামও কিন্তু বাজারে কম নয়। এটি মূলত আদা জাতীয় একটি গাছ। যার গোড়ার দিক থেকে লম্বা ফুলের স্টিক বের হয়। এ ফুলের ফলই হচ্ছে আমাদের পরিচিত এলাচ। 

এলাচের ধরন: 

এলাচ দু’রকমের - বড় ও ছোট। বড় এলাচ এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের শীত প্রধান অঞ্চলে প্রচুর জন্মায়। বড় এলাচের ৫০ প্রজাতির মধ্যে এ উপমহাদেশে বহু আগে থেকে বেশ কয়েকটির ফলন হয়। সিলেট অঞ্চলে যে এলাচ জন্মে, তার নাম মোরঙ্গ এলাচ। আমাদের দেশে জঙ্গলে যে আদা গাছ জন্মায়, বড় এলাচ গাছ দেখতে অনেকটা সে রকম।

এলাচের চাষের জমিঃ 

উর্বর মাটি এবং হালকা রোদ্র-ছায়া যুক্ত জায়গায় এলাচ গাছ ভালো জন্মায়। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ছায়ার মধ্যে এলাচ গাছের ফলন ভালো হয়। এলাচ চাষের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। অন্য গাছের ছায়ার নিচে অর্থাৎ মেহগনি, আকাশমনি বা এ জাতীয় বাগানের ভিতর (গাছের ছায়াযুক্ত স্থানে) অথবা বাড়ির আঙ্গিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এলাচ চাষ করলে এলাচের ভালো ফলন হয়। অন্য ফসলের মাঠে এলাচ চাষ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায় না।

চারা রোপনের হারঃ

শতক প্রতি ১৪ টি এলাচের চারা লাগে অর্থাৎ বিঘা প্রতি ( ৩৩ শতকে ) ৪৬০ টি চারা রোপণ করা যায়।

চারা রোপণের দূরত্বঃ

এলাচের চারা লাইনে রোপণের জন্য চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে  ৪ হাত এবং লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব হবে ৩.৫ ( সাড়ে তিন) হাত। এই রোপণ দূরত্ব অনুসারে এলাচের চারা রোপণ করা ভালো।

জমি তৈরি:

এলাচ চাষের জমিতে (যদি এটেল মাটি হয়) বালির পরিমাণ কম থাকলে অতিরিক্ত বালি মেশাতে হবে। দোআঁশ মাটিতে কিছু করতে হবে না। তবে এই ফসলের চাষের জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিতে হবে। প্রয়োজনে মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে।

  • জৈব উপদানের পরিমাণ কম থাকলে গোবর সার বা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা উত্তম।
  • ভালো ফলনের জন্য ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ ফুট চওড়া ও দেড়ফিট গভীর গর্ত করে গোবর সার বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • সাথে অবশ্যই দানাদার কীটনাশক দিতে হবে।
  • প্রতি গর্তের গোবরের সাথে ২০০ গ্রাম।
  • চারা বপনের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
  • প্রতি শতকে প্রায় ১৪ টি এলাচের চারা লাগানো যেতে পারে।

 

সার প্রয়োগ ও সেচ ব্যবস্থাপনা:

এলাচ চাষাবাদের জমি তৈরির সময় জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতকে…

  • টিএসপি ৫০০ গ্রাম,
  • পটাশ ৫০০ গ্রাম,
  • এছাড়া  ফুরাডান নামক দানাদার কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

তারপর জমিতে ভালোভাবে সেচ দিতে হবে যেন মাটির সাথে সার গুলো খুব ভালো করে মিশে যায়।

রোগবালাই দমন ও পরিচর্যা:

  • এলাচ সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে, কারণ আগাছা গাছের বৃদ্ধি বাধা গ্রস্থ করে।
  • প্রথম বার এলাচ সংগ্রহ করার পর গাছের ডাল ছাটাই করতে হবে (মরা ডাল পাতা ও দুর্বল ডাল)।
  •  ছাটাই প্রক্রিয়া শীতকালে করা ভালো, কারন শীতকালে গাছে কোন ফুল ও ফল হয় না।
  • গাছে রোগ আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • এবং পোকা দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় বালাই নাশক দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ:
এলাচের চারা বপনের ২ বছর পর ফল ধরা শুরু হয় (ফলন ভালো পাওয়া যায় ৩ বছর পর)। সাধারনত আষাঢ় মাসে এলাচ গাছে ফুল আসে এবং ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিন মাসের শেষ দিকে এলাচ পরিপক্ক হয়।

ফল পরিপক্ক হলে তা সংগ্রহ করতে হবে। পরিপক্ক ফল দেখতে হালকা সবুজের উপর লাল রঙ হয়ে থাকে।