তেজপাতা বহুল ব্যবহৃত একটি মসলা। এটি বহু কাল ধরেই রান্নায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এর ঔষধি গুনের কারনেও এটি জনপ্রিয়। এটির সহজলভ্যতা বেশি হওয়ার কারণে ও রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধিতে জনপ্রিয়তা বেশি। এর বাকল থেকে সুগন্ধি তেল তৈরি হয় ও সাবান তৈরিতে ও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
তেজপাতার গুনাগুণঃ
তেজপাতা মস্তিস্ক, হৃদযন্ত্র ও যকৃতের শক্তিবর্ধক, প্রফুল্লতা আনয়নকারক, পাকস্থলী ও অন্ত্রের ব্যথানিবারক, ও পুষ্টিকারক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
জলবায়ুঃ
প্রায় সব ধরনের মাটি ও আবহাওয়ায় তেজপাতা জন্মাতে পারে। তবে সুনিষ্কাশিত গভীর বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি তেজপাতা চাষের জন্য আদর্শ। সেক্ষেত্রে জমির প্রকৃতি অবশ্যই উঁচু হতে হবে। তেজপাতা একটানা অনেক দিন খরা সহ্য করতে পারে না।
প্রতি একর জমিতে ২৮০-৩০০ টি চারা রোপন করা যেতে পারে।
বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস তেজপাতার চারা রোপন করার উপযুক্ত সময়।
জমিতে যখন ছায়া থাকবে তখন চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে চারাটি যেন সতেজ ও পরিপুষ্ট হয়। চারা রোপন করার জন্য জমিতে মাদা তৈরি করতে হবে। একটি মাদা থেকে আরেকটি মাদার দূরত্ব হবে ৬ মিটার, এবং গভীরতা হবে ৬০ সেমি। চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে চারার গোড়া যেন সোজা থাকে। চারা লাগানোর পর গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কোন কারনে কোন চারা মারা গেলে সেই চারা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং সেখানে নতুন করে চারা লাগাতে হবে। তেজপাতার সাধারনত বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়ে থাকে।
কিন্তু যে গাছ বীজের জন্য ব্যবহার করা হবে সে গাছ থেকে কোন পাতা সংগ্রহ করা যাবে না। চারা লাগানোর পর সেখানে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগে থেকেই জমিতে বড় কোন ছায়া দান কারি গাছ লাগানো থাকলে ভালো হয়। চারা লাগানোর পর প্রয়োজনে জমিতে জল সেচ দিতে হবে।
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০ কেজি গোবর, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, টিএসপি ১৫০ গ্রাম, এমওপি ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপন করার সময় প্রতি মাদায় ১০ কেজি ছাই ও ১০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা উচিত।
শুকনা মৌসুমে জমিতে প্রয়োজনীয় জল সেচ দিতে হবে। তেজপাতা গাছে যেন জলের অভাব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।তবে জমি তে জল যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জল নিকাশের ভালো ব্যবস্থা রাখতে হবে।
জমিতে আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। আগাছা গাছের পুষ্টিতে ভাগ বসায়। তাই নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে। তেজপাতা গাছের বয়স যখন ৮-৯ বছর হবে তখন উক্ত গাছ কেটে ফেলতে হবে।
তেজপাতা গাছে সাধারনত পাতা পোড়া ও পাতায় গল রোগ দেখা যায়। পাতা পোড়া রোগ সাধারনত ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। কচি পাতায় এই রোগ বেশি হয়। এই রোগে পাতার কিনারায় বাদামি দাগ দেখা যায় । আস্তে আস্তে সমস্ত পাতায় এই দাগ ছড়িয়ে পড়ে এবং তেজপাতা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ রোগ আক্রমন করলে গাছে টিল্ট মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এক লিটার জলের সাথে ১ মিলি টিল্ট মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর গাছে ৪-৫ বার স্প্রে করে দিতে হবে।
তেজপাতার আরেকটি রোগ হচ্ছে তেজপাতার গল সমস্যা। এটি নানা কারনে হতে পারে। এই রোগ দেখা দেয় যদি জমি শুকনা থাকে। এই রোগের হাত থেকে বাঁচতে হলে জমিতে নিয়মিত জল সেচ দিতে হবে। আক্রান্ত পাতা ও ডাল কেটে ফেলে দিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এক লিটার জলের সাথে ১.২ মিলি লিকাড় বা পেগাসাস মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে ৩-৪ বার । এই কাজটি বিকেল বেলা করতে হবে।
১ বছর পর পর পাতা সংগ্রহ করা যায়। বৃষ্টির জলে পাতার ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাই অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা যায়।গাছ থেকে একবার পাতা তোলার পর গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। পাতা সংগ্রহ করার পর একে ১ সপ্তাহ ছায়াতে শুকাতে হবে। প্রতি একর থেকে ৩০০-৪০০ কেজি শুকনা তেজপাতা পাওয়া যায়।