মরিচ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। এটি বাংলাদেশের নিত্য ব্যবহৃত মশলা। মরিচ কাঁচা ও পাকা দুই অবস্থায় খাওয়া হয়। বাংলাদেশের সব জায়গায়ই এর চাষ হয়। মরিচ শুধু মশলা বা রসনাতৃপ্তিতে ব্যবহার হয় না। পরিমিত এবং নিয়মিত খেলে এটি ভিটামিন এ, বি, সি-এর যোগান দেয়।
পুষ্টিগুন:
কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ১০০ গ্রাম মরিচে ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে । তাছাড়া মরিচে নানা রকম পুষ্টিগুন যেমন- ১ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৭ গ্রাম আঁশ, ১০৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২ গ্রাম আমিষ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ মিলিগ্রাম লৌহ, ২৩৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও ২৪ গ্রাম শর্করা ইত্যাদি রয়েছে ।
উপযুক্ত জমি ও মাটি:
প্রচুর আলো-বাতাস এবং পানি, সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী।
জাত পরিচিতি:
বাংলাদেশে ঝাল ও মিষ্টি এই দুই ধরনের মরিচ দেখা যায়। ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কামরাংগা, আকালী ও কালো মরিচ খুব ঝাল।
চারা তৈরি:
জমি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে আগাছা বাছাই করে ৩x১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়। শীতকালের জন্য ভাদ্র-আশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। চারা ১০ সে.মি. উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।
চারা রোপণ:
আগাছা পরিষ্কার করে, চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্ততির পর ৪-৫ টি চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০-৭০ সে.মি., ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২-৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা:
মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় প্রর্যাপ্ত গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের ২৫ দিন পর ১ম কিস্তির সার (৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার) প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।
সেচ ব্যবস্থা ও আগাছা দমন:
গ্রীষ্মকালে ৪ থেকে ৫ দিন এবং শীতকালে ১০ থেকে ১২ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। তাছাড়া প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পরে সেচ দেয়া প্রয়োজন। সেচের কয়েক দিন পর মাটিতে চটা দেখা দিলে ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে শিকড় প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস পায়। এতে গাছের বৃদ্ধি বেশি হয়। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং সংযোজিত সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
পোকামাকড়:
রোগবালাই:
সতর্কতাঃ
বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন।ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
ফলনঃ
জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৪০-৫০ কেজি।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
মরিচের পাকা ফল গাছ থেকে তুলে, শুকিয়ে তা সংরক্ষণ করা হয়। সূর্য্যের আলোর সাহায্যে ফল শুকানো আমাদের দেশে একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু একটু খেয়াল না করলে বেশি সূর্যের তাপে ফল সাদাটে রং ধারন করে। সংগ্রহকৃত ফলে বৃষ্টি বা শিশির পড়লে ‘ফল পঁচা’ রোগ দেখা দেয়। মরিচ শুকানোর সময় মরিচের বোটা যেন খুলে না যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। মরিচ ৬৫০ সে. তাপমাত্রার গরম পানির মধ্যে ৩ মিনিট রাখলে ফলের শুকানোর সময়টা কমে যায় ফলে মরিচের রং ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মরিচ সংগ্রহের পরের ক্ষতি কম হয়। মরিচ শুকানোর পর মাচার উপরে টিনের ডোল, গোলা, বেড়ি, পলিথিন বা ড্রামে রাখতে হবে। মরিচের গোলা এমন হওয়া উচিৎ যেন বাইরে থেকে বাতাস ঢুকতে না পারে। যে সব ঘরের উপর গাছের ছায়া পড়ে না এবং স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় অবস্থিত নয় কেবলমাত্র সেসব ঘরেই মরিচের গোলা তৈরী করা দরকার।