চট্টগ্রামের সিআরবি শিরিষ তলা মাঠে বৃক্ষমেলা শুরু

পান

পান একটি অর্থকরী ফসল। পানে নানা রকম ভেষজ গুণ রয়েছে।

পুষ্টিগুনঃ পান পাতায় রয়েছে গ্যাস্ট্রো প্রটেকটিভ, অ্যান্টি-ফ্লটুলেন্ট এবং কার্মিনেটিভ এজেন্ট যার কারণে পান চাবানোর সময় মুখে স্যালাইভা তৈরি করে। যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পানে নিকোটিন এসিড রয়েছে ০.৬৩-০.৮৯ গ্রাম, ভিটামিন এ ১.৯-২.৯ এমজি, থায়ামিন ১০-৭০ মাইক্রোগ্রাম, রিবোফ্লোভিন ১.৯-৩০ মাইক্রোগ্রাম, আয়োডিন ৩.৪ মাইক্রোগ্রাম এবং শক্তি রয়েছে ৪৪ কিলোক্যালরি।

জাতঃ সাধারনত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজানী, মাঘি, দেশী, বরিশাল ও ঝালি প্রভৃতি জাতের পান বরজে চাষ করা হয়।

বপনের সময়ঃ মে-সেপ্টেম্বর (জৈষ্ঠ-আশ্বিন), কিন্তু খাসিয়া পানের ক্ষেত্রে জুন থেকে আগস্ট (জৈষ্ঠ-ভাদ্র) উপযুক্ত সময়।

বীজঃ কাটিং সামান্য কাৎ করে (৪৫ ডিগ্রী) অর্ধেক অংশ মাটির ভেতর এবং বাকি অংশ চোখ বা মুকুল মাটির ওপর রাখা হয়। দ্বিসারি পদ্ধতিতে ৩-৬ ইঞ্চি লম্বা কাটিং লাগে শতক প্রতি ৪০০-৫০০ টি।

উপযোগী জমি ও মাটিঃ পান চাষের জন্য দরকার উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি। (ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য ভাল)।

জমি তৈরীঃ জমিকে আগাছামুক্ত, সমতল ও উঁচু করে তৈরি করে প্রতি ৬০ সে.মি পর পর ২০ সে.মি চওড়া করে নালা তৈরি করে নিতে হয়। বরোজের বাইরে একটি বড় নিকাশ নালার সাথে ছোট নালাগুলোকে যুক্ত করে দিতে হয়।

রোপনঃ বরোজের ভেতরে চারিদিকে ২৫ ইঞ্চি চওড়া রাস্তা রাখতে হয়। প্রতিটি বেড ৫০ ইঞ্চি চওড়া করে তৈরি করে নেয়া দরকার। প্রতিটি বেডে দুই লাইনে চারা রোপণ করতে হয়। একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দূরত্ব ১২-১৫ ইঞ্চি রাখতে হয়। আবার প্রতি দুই বেডের মাঝখানে ১২ ইঞ্চি নালা রাখা দরকার।

সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নামঃ তিলের খৈল বা নিম তৈল, টিএসপি, এমওপি, ইউরিয়া ও এসএসপি।

সার প্রয়োগের সময়ঃ 
প্রাথমিক ভাবে জমি তৈরির সময় শেষ চাষের পর মাটিতে একর প্রতি ২০০ কেজি তিলের খৈল বা নিম তৈল, ৪০ কেজি টিএসপি ও ৬০ কেজি এমওপি সার মিশিয়ে দেয়া দরকার। পরবর্তিতে প্রতি শতক জমির জন্য খৈল ২০ কেজি, ২.৫ কেজি এসএসপি, ৬০০ গ্রাম এমওপি এবং ১.৮ কেজি ইউরিয়া সার সমান চার ভাগ করে বছরে ৪ বার জমিতে প্রয়োগ করতে হয়।

আগাছা দমনঃ
সময়ঃ কাটিং এর গোড়ার আস পাশে আগছা হলে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ ছোট কোদাল/নীড়ানির সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার করা যেতে পারে।

সেচ ব্যবস্থাঃ
সেচের সময়ঃ পরিমিত পানি / সেচ দিতে হবে এবং চারা রোপণের পর ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বেশি পানি তাকলে তা বের করে দিতে হবে।

 

পানের পোকা মাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনাঃ

১।পানের কালো মাছি (Black Fly of Betel Leaf)

লক্ষণঃ

  • পূর্ণ বয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয় অবস্থায় ক্ষতি করে।
  • এরা পান পাতার রস চুষে খায়।
  • আক্রান্ত পাতা হালকা বাদামি রঙের হয়।

প্রতিকারঃ

  • আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে।
  • পানের বরজ ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • আক্রমন বেশি হলে টলস্টার ২ মিলি, ডায়মেথয়েট ( টাফগর/ রগর ) ১ মিলি/ লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।

২। পানের বরজের উঁইপোকা (Termite of Betel Leaf )

Termites of Betel Leaf    

 

উইপোকার আক্রমণ         পানের উঁইপোকা

লক্ষণঃ

  • উঁইপোকা পানের লতার কোন ক্ষতি করে না।
  • এটি পানের বরজ তৈরির উপকরণ নষ্ট করে।
  • ফলে পানের বরজ খাড়া থাকতে পারে না।
  • এতে ফলন বিশেষভাবে কমে যায়।

প্রতিকারঃ

  • মুড়ি পান চাষ করা যাবে না।
  • সেচ দিয়ে ক্ষেত ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  • উঁইপোকার ঢিবি সংগ্রহ করে রাণী মেরে ফেলতে হবে।
  • আক্রমন বেশি হলে নাইট্রো ৪ লিটার/হেক্টর, ডার্সবান বা পাইরিফস ( ক্লোরপাইরিফস) ৫ মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।

পানের রোগ বালাই ও প্রতিকারঃ  

. রোগের নাম : কাণ্ড পচা/গোড়া পচা (Stem rot/Collar rot/Foot rot)
রোগের কারণ : স্ক্লেরোসিয়াম রফসি (Sclerotium rolfsii) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : ছত্রাকগুলো প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন্যান্য শস্য আক্রমণ করে। মাটিতে বেশি জৈব সার ও খড়কুটা থাকলে এবং পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে।

 

রোগের লক্ষণ :

  • গ্রীষ্মকালে মাটির ওপর শায়িত লতায় এ রোগ দেখা যায়।
  • গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে। তাই গোড়ায় লক্ষ করলে দেখা যাবে মাটির কাছের একটি বা দুটি পর্ব মধ্য কালো বর্ণ ধারণ করেছে।
  • উপরের লতার পাতা হলুদ হয়ে যায় ও ঝড়ে পড়ে।
  • মাটি সংলগ্ন লতার ওপর সাদা সুতার মতো মাইসেলিয়া (ছত্রাক ) দেখা যায়। পরে হালকা বাদামি থেকে বাদামি সরিষার ন্যায় এক প্রকার অসংখ্য দানার মতো স্কেরোসিয়া দেখা যায়।
  • মাটি সংলগ্ন ডাঁটা পচে যায় এবং গাছ ঢলে পড়ে মরে যায়।

রোগের প্রতিকার :

  • রোগ প্রতিরোধী পানের জাত ব্যবহার করতে হবে।
  • রোগাক্রান্ত লতা-পাতা বরজ থেকে তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।
  • গভীর ভাবে জমি চাষ দিয়ে রোদ্রে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • পানের বরজ সবসময় আগাছা মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নতুন বরজ তৈরির ক্ষেত্রে সুস্থ সবল রোগমুক্ত পানের লতা সংগ্রহ করতে হবে।
  • ট্রাইকোডারমা কম্পোস্ট সার প্রতি গাছে ৫ গ্রাম হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  • লতা রোপণের পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে প্রোভেক্স বা অটোস্টিন বা নোইন দ্বারা লতা শোধন করে নিতে হবে।
  • বরজে রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি স্কোর বা ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট বা ২.৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ বা ২ গ্রাম কম্প্যানিয়ন ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
  • বরজে রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স বা অটোস্টিন বা নোইন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
  • গাছের গোড়ায় কপার অক্সিক্লোরাইড বা ১% বর্দোমিকচার ব্যবহার করতে হবে।

. রোগের নাম : শিকড় পচা (Root rot)
রোগের কারণ : রাইজোকটোনিয়া সোলানি (Rhizoctonia solani) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : মাটি, ফসলের পরিতক্ত অংশ ও পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।

রোগের লক্ষণ :
 

  • গাছের শিকড়সহ মাটির নিচের সব অংশই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  • প্রাথমিক অবস্থায় পাতা মলিন হয়ে ঢলে পড়ে। পরে লতা ঈষৎ বিবর্ণ হয়ে মরে যায়। এ অবস্থায় শিকড় লাল বর্ণ দেখায় এবং ভেঙে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে যায়।

রোগের প্রতিকার :

  • রোগাক্রান্ত লতা-পাতা বরজ থেকে তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধী পানের জাত ব্যবহার করতে হবে।
  • পানের বরজ সবসময় আগাছা মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • সম্ভব হলে মাটি শোধন করতে হবে।
  • লতা রোপণের পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে প্রোভেক্স বা অটোস্টিন বা নোইন দ্বারা লতা শোধন করে নিতে হবে।
  • বরজে রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স বা অটোস্টিন বা নোইন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

. রোগের নাম : ঢলে পড়া (Wilt)
রোগের কারণ : ফিউজারিয়াম অক্সিস্পোরাম (Fusarium oxysporum) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : ছত্রাকগুলো প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন্যান্য শস্য আক্রমণ করে এবং পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে।

রোগের লক্ষণ :

  • গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে। গাছের উপরের পাতা হলুদ হয়ে যায়।
  • কাণ্ডের ভাস্কুলার টিস্যুতে আক্রমণ করে। গোড়ার দিকে কাণ্ড লম্বালম্বিভাবে ফাটালে ভেতরে দাগ দেখা যায়। পরে গাছ ঢলে পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে গাছ মরে যায়।

রোগের প্রতিকারঃ

  • রোগাক্রান্ত গাছ তুলে এবং ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • গাছের গোড়ার চতুর্দিকের পৃষ্ঠের মাটি নেড়ে শুষ্ক করে দিলে এ রোগ অনেকাংশে দমন হয়।
  • লতা রোপণের পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে প্রোভেক্স বা অটোস্টিন বা নোইন দ্বারা লতা শোধন করে নিতে হবে।
  • রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স বা অটোস্টিন বা নোইন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

. রোগের নাম : গোড়া–লতা  পাতা পচা (Foot rot/vine rot and leaf rot)
রোগের কারণ : ফাইটোফথোরা প্যারাসাইটিকা (Phytophthora parasitica) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : কম ম্যাগনেসিয়াম ও বেশি লবণাক্ত মাটিতে রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। অবিরত বৃষ্টিপাত হলে এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

 

রোগের লক্ষণ :
 

  • প্রাথমিক অবস্থায় পাতায় পানি ভেজা হলুদাভ বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে দাগ প্রসারিত হয়ে বড় হতে থাকে। দাগ পাতার কিনারা হতেও শুরু হতে পারে। অবিরাম বৃষ্টিপাত স্থলে রোগটি পাতা হতে বোঁটায় এবং লতায় সংক্রমিত হয়ে থাকে।
  • আক্রান্ত পাতা ও লতায় এক প্রকার কালো দাগ পড়ে। পরে ওই দাগের মাঝখানে বিবর্ণ হয়ে পচে যায়।
  • আক্রান্ত পাতা ঝরে পড়ে। পরবর্তীতে গাছের শিকড়, লতা ও পাতা পচে এক প্রকার দুর্গন্ধ নির্গত হয়। এভাবে আক্রমণ বেশি হলে গাছ মারা যায়।

রোগের প্রতিকারঃ

  • রোগাক্রান্ত গাছের পাতা তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগমুক্ত লতা বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
  • রোগ প্রতিরোধী জাত বারি পান-২ চাষ করতে হবে। ঘন ঘন সেচ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ট্রাইকোডার্মা জীবাণু সার ৫ গ্রাম হারে প্রতি গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • বরজে রোগ দেখা দিলে কনটাফ ৫ ইসি ১ মিলি/ লিটার পানিতে অথবা রিডোমিল গোল্ড বা কম্প্যানিয়ন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়াসহ সব গাছে ১০ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

. রোগের নাম : ক্ষত বা পাতার দাগ (Anthracnose)
রোগের কারণ : কোলেটোট্রিকাম পাইপারিস (Colletotrichum piperis) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার : বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে দ্রুত রোগ বাড়ে।

  পানের পাতার দাগ রোগ

রোগের লক্ষণ :
 

  • প্রথমে পাতায় বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট ফোস্কার মতো অসম দাগ পড়ে। দাগগুলো কিনারা থেকে ভেতরের দিকেই বেশি দেখা যায়।
  • দাগগুলো হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি হয় এবং চারিদিকে হলুদ বর্ণের হয়। দাগগুলো ক্রমশ বড় হতে থাকে। ফলে অনেক দাগ এক সঙ্গে মিলিত হয়ে বড় দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি করে।
  • পরে প্রতিটি দাগের মাঝখানে কালো ও চারপাশে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। দাগগুলোর মাঝখানটা শুকিয়ে যায় এবং সমগ্র পাতা নষ্ট হয়ে পড়ে। বেশি দাগ হলে পাতা খসে পড়ে।

রোগের প্রতিকার :

  • রোগাক্রান্ত লতা-পাতা বরজ হতে তুলে পুড়ে করতে হবে। নতুন বাগানের জন্য রোগমুক্ত লতা রোপণ করতে হবে ।
  • রোগ প্রতিরোধী জাত বারি পান-১ ও বারি পান-২ চাষ করতে হবে। বরজে রোগ দেখা দিলে টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছে ১০ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

. রোগের নাম : সাদা গুড়া (Powdery mildew)
রোগের কারণ : অয়িডিয়াম পাইপারিস (Oidium piperis)
রোগের বিস্তার : গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া এবং ৫০ থেকে ৬০% বাতাসের আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ।

রোগের লক্ষণ :

  • পাতার নিচের পিঠ সাদা থেকে হালকা বাদামি গোলাকৃতি পাউডার লাগানো দাগ পড়ে। পরে দুই পিঠেই দাগ হয়।
  • দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং সব পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। দাগ পড়া এলাকাটি পরে বাদামি রঙের হয়, শুকনো ও ভঙ্গুর হয়।
  • কচি পাতা আক্রান্ত হলে সে পাতা আর বাড়ে না এবং বিকৃত হয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়ে। লতার বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হয়।

রোগের প্রতিকার :

  • রোগমুক্ত গাছ থেকে লতা সংগ্রহ করতে হবে।
  • ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ এবং আর্বজনা পুড়ে ফেলতে হবে।
  • দ্রুতবেগে পানি স্প্রে করলেও রোগের প্রকোপ কমে যায়।
  • রোগ দেখা দিলে থিউভিট ৮০ ডব্লিউজি অথবা কুমুলাস ডিএফ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • রোগের আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে অটোস্টিন ১ গ্রাম অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।

 

বিশেষ পরিচর্যাঃ
রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা: কাটিং থেকে অনেক সময় অনেকগুলো চারা জন্মে, সেৰেত্রে অপ্রয়োজনীয় চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। লতা বাড়তে বাড়তে বরোজের ছাউনি বা ছাদে ঠেকে গেলে নীচের দিকের পাতা তুলে রতাটি নামিয়ে দিতে হয়। এতে পান পাতার আকার স্বাভাবিক থাকে এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। বছরে ৩/৪ বার গোড়ার মাটি তুলে দেয়া দরকার।

বরোজ তৈরি: পান গাছকে ছায়া দেয়া ও প্রবল বাতাসের হাত থেকে রৰা করার জন্য উন্নতমানের বরোজ তৈরি করা একান্ত জর্বরি। বরোজ তৈরিতে পাকা বাঁশ/খুঁটি, বাঁশের চটা, ছন বা কাশ জাতীয় ঘাস, খড় এসবের দরকার হয়। বরোজ তৈরির জন্য প্রথমে ২.৫-৩.০ মিটার লম্বা পাকা বাঁশের খুঁটি তৈরি করে গোড়ায় আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে। এতে বরোজে উঁইয়ের আক্রমণ হবে না। খুঁটি চারিদিকে পোঁতার পর তাতে বাঁশের চটা, ছন/খড় দিয়ে ছাউনি ও শুকনা কলাপাতা, খেজুর পাতা, সুপাড়ি পাতা এসব দিয়ে বেষ্টনী বা বেড়া দেয়া হয়। ভেতরে চারা রোপনের পর প্রয়োজনমত কাঠি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।

লতা নামানো: পানের লতা বরজের (পান চাষের জন্য তৈরি ছাউনি বা ঘর) ছাউনি পর্যন্ত (২-২.৫ মিটার উচ্চতা) পৌঁছালে তা টেনে নিচে নামিয়ে পাতাছাড়া অংশকে পেঁচিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একে বলে পানের লতা নামানো। বছরে সাধরাণত দু’বার (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ এপ্রিল এবং ১৫ জুলাই-১৫ সেপ্টেম্বর) পানের লতা নামানো হয়। গাছের বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে লতা নামাতে হবে। বৃদ্ধি বেশি হলে ঘনঘন নামাতে হবে। লতা নামানোর আগে সংগ্রহ করার যোগ্য সব পান তুলে ফেলতে হবে। লতার উপরের ১২-২০ ইঞ্চি অংশ মাটির উপরে রেখে নিচের অংশটুকু গোল করে অথবা বাংলা ৪ এর মতো করে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে দিতে হবে।

 

ফসল কাটাঃ
সময়ঃ বর্ষাকালে চারা রোপণ করা হলে ৫-৬ মাস পর থেকেই পাতা তোলা শুরু করা যায়। নিচের দিকের পাতা আগে তুলতে হয়। এতটি পাতা সম্পূর্ণভাবে পরিণত হতে ৬-৮ সপ্তাহ সময় দরকার হয়।

পদ্ধতিঃ 
সাধারনত হাত দিয়ে পান পাতা তুলতে হয়। লতার নিচের দিকের পাতা আগে তুলতে হয়।