তুলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঁশ জাতীয় ফসল, বাংলাদেশে তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বস্ত্রখাতে ব্যবহৃত আঁশের ৭০—৭৫% আসে তুলা থেকে। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে বর্তামানে ৫৪ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন যার মাত্র ৩% দেশে উৎপন্ন হয়। এ চাহিদা পুরণের জন্য বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করতে হয়। তাই বাংলাদেশে তুলা উপযোগী অঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতিতে তুলা চাষ করে তুলার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা প্রয়োজন।
মাটি ও জলবায়ু :
তুলা উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। চারাগাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ২৪—৩৩° সে. তাপমাত্রা উপযোগী তুলাগাছ অতিবৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। বার্ষিক ১০০ সে.মি. বৃষ্টি তুলার জন্য উত্তম। সবধরনের মাটিতেই তুলাগাছ জন্মে। তবে বৃষ্টি পানি জমে থাকে না এমন উঁচু জমি ভাল, দেঁাআশ ও বেলে দেঁাআশ মাটি তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। মাটির পিএইচ (এম) ৬—৭.৫ হলে ভাল হয়।
তুলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে কারণ তুলা গাছের মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে। সেজন্য জমি ৬—৮টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হবে যেন কোথায় পানি জমতে না পারে। বীজ বপনের সময় রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই বীজ বপন করা যায়। রবি মৌসুম : মধ্য শ্রাবণ—ভাদ্র মাস, খরিফ মৌসুম : জৈষ্ঠ্য—আষাঢ় মাস।
শতকরা ৮০ ভাগ বা তার অধিক অংকুরোদগম ক্ষমতা সম্পন্ন ৮—১০ কেজি/হেক্টর বীজ প্রয়োজন, বীজবাহিত রোগ দমনের জন্য ভিটাডেক্স—২০০/পেনকোজে দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। [২—৩ গ্রাম/কেজি বীজ] বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ তুলাবীজ থেকে অতিরিক্ত তুলা (ফাজ) সরানোর কয়েকটি পদ্ধতি আছে।
তুলার জাতঃ
তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক উদ্ভাবিত সিবি-১২, সিবি-১৩ ও সিবি-১৪ জাতের তুলাবীজ সারা দেশে চাষ করা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি বীজ কোম্পানি কর্তৃক আমদানিকৃত হাইব্রিড বীজ (রূপালি-১, সৌরভ, ডিএম-২ প্রভৃতি) বর্তমানে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। জাত ভেদে তুলার বীজ ১ আষাঢ় থেকে ১৫ শ্রাবণ পর্যন্ত (১৫ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত) বপনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে ৩০ শ্রাবণ অর্থাৎ ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বীজ বপন করা যেতে পারে। হাইব্রিড জাত আগাম বপন করা উত্তম। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জাতের ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি ১.৫০ কেজি এবং হাইব্রিডের ক্ষেত্রে ৫০০-৬০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের আগে তুলাবীজ ৩-৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে শুকনো মাটি বা ছাই দিয়ে ঘষে নেয়া উত্তম।
জমিতে শেষ চাষ দেয়ার পর এক—চতুর্থাংশ ইউরিয়া অর্ধেক এমপি সার এবং অন্যন্য সারসমূহ সম্পূর্ণ অংশই জমিতে প্রয়োগ করতে হবে; বাকী ইউরিয়া ও এমপি সার সমান তিনভাগে ভাগ করে তুলাগাছের বয়স ২০—২৫ দিন হলে প্রথম বার, ৪০—৫০ দিন হলে দ্বিতীয় বার এবং ৬০—৭০ দিন হলে তৃতীয় বার পাশ^র্ প্রয়োগ করতে হবে।
তুলা ফসলে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। নিচের তালিকায় কিছু অনিষ্টকারী পোকার নাম ও দমন ব্যবস্থা দেয়া হল।
পোকার নামঃ
কীটনাশকের নামঃ
তুলার রোগ :
প্রধান রোগ হলে অ্যানথ্রাকনোজ, ড্যাম্পিং অফ বা ঢলে পড়া রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ দমনের জন্য ভিটাভেক্স ২০০, কিউপ্রভিট/ ডাইমেন এম ৪৫, টিল্ট ইত্যাদি ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
অধিক ফলন ও ভালমানের আঁশ পেতে হলে তুলা সংগ্রহের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
তুলা সংগ্রহের সময় রৌদ্র উজ¦ল দিন তুলা সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত রবি মৌসুমে তুলা কাত্বির্ক—অগ্রাহায়ণ মাসে এবং খরিফ মৌসুমের তুলা ফাল্গুন—চৈত্র মাসে সংগ্রহ করা হয়।
১। শুধুমাত্র পরিপক্ক বল থেকে তুলা সংগ্রহ করতে হবে বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে। বল ফেটে তুলা বের হলেই বল পরিপক্ক হয়েছে বুঝতে হবে।
২। সাধারণ বীজ বপনের ৫—৬ মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। ফুল ফোটার ৫০—১০০ দিনের মধ্যে বল পরিপক্ক হয়।
৩। বল পরিপক্ক হলে দেরি না করে সংগ্রহ করে ফেলতে হবে তা না হলে তুলায় ময়লা লেগে তুলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪। তিনবার তুলা সংগ্রহ করতে হয়। যখন ৩০—৪০% বল ফেটে যায় তখনই প্রথমবারের মত তুলা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ১৫—২০ দিন পর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিতে বাকী সব তুলা সংগ্রহ করতে হবে।
৫। বল সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ধূলাবালি, ময়লা বা শুকনা পাতা বলের সাথে লেগে না থাকে।
৬। রোগ বলা দ্বারা আক্রান্ত বল এবং ভাল তুলা আলাদা ভাবে উঠাতে হবে। তুলা ৩—৪ বার রোদে শুকিয়ে গুদাম জাত করতে হবে।
৭। খারাপ ও নষ্ট বীজতুলা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
৮। তবে ফাটা বল প্রায় এক সপ্তাহ গাছে রেখে শুকাতে পারলে অঁশ এর গুণগতমান আরও উন্নত হয়।