রবি মৌসুমের একটি প্রধান সবজি। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বাঁধাকপির চাষ হয়। বাঁধাকপি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। এদেশে উৎপাদিত বাঁধাকপির প্রায় সব জাতই বিদেশী ও হাইব্রিড। সব জাতের বীজ এদেশে উৎপাদন করা যায়না। তবে এদেশে বীজ উৎপাদন করা যায় বারি উদ্ভাবিত এমন জাতও আছে।
পুষ্টি উপাদান:
বাঁধাকপি একটি অন্যতম পুষ্টিকর পাতা জাতীয় সবজি। এত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ‘ রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
বাধাকপি চাষের জন্য কিছু পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া হলো:
মাটি তৈরি :
অত্যধিক বেলে মাটি ছাড়া যে কোন ধরনের মাটিতে এটি জন্মে। বেলে দোঁআশ থেকে পলি দোঁআশ মাটি এ ফসলের জন্য উপযোগী। গভীর চাষ দিয়ে মাটির ঢেলা ভেঙ্গে আগাছা পরিষ্কার করে ভালভাবে বাঁধাকপির জন্য জমি তৈরি করতে হবে।
বীজ বপন :
বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত হয়। উত্তমরূপে জমি তৈরি করার পর ১৫-২০ সেমি উঁচু ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হয়। পাশাপাশি ২টি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা রাখতে হবে। বেডের উপর ৬০ সেমি দূরত্বে ২টি সারি করে সারিতে ৪৫ সেমি দূরে দূরে চারা লাগাতে হয়।
লাগানোর সময় :
বাঁধাকপি শীতকালেই ভাল হয়। শীত মৌসুমে আগাম ও নাবী করেও চাষ করা যায়। তবে সমপ্রতি গ্রীষ্ম ও বর্ষকালেও বাঁধাকপি উৎপাদিত হচ্ছে। মৌসুমভেদে বাঁধাকপির বীজ বপনের সময় নিচে দেয়া হল-
সময় বীজ বপনের সময় চারা রোপণের সময়
আগাম শ্রাবণ-ভাদ্র ভাদ্র-আশ্বিন
মধ্যম আশ্বিন-কার্তিক কার্তিক-আগ্রহায়ণ
নাবি অগ্রহায়ণ-মধ্য পৌষ পৌষ-মধ্য মাঘ
বীজের পরিমাণ:
জাত ভেদে প্রতি শতকে ২-৩ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৫০০-৭০০ গ্রাম।
সার প্রয়োগ ও সেচ দেয়া:
প্রতি শতকে গোবর ১২৫ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৮০০ গ্রাম, এমওপি ৬৫০ গ্রাম সার দিতে হবে। সম্পূর্র্ণ গোবর ও টিএসপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ২ কিসি-তে চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর একবার এবং ৩০-৪০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার পর পরই সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে। গাছ বড় হবার সাথে সাথে দুই সারির মাঝখান থেকে মাটি তুলে সারি বরাবর আইলের মত করে দিতে হবে। ফলে দু’সারির মাঝে নালা তৈরি হবে। এতে সেচ দিতে বেশ সুবিধে হবে।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা :
এদেশে বাঁধাকপির সবচে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে।
রোগ ব্যবস্থাপনা :
বাঁধাকপির পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ, মাথা পচা বা গ্রে মোল্ড, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে।
কালো পচা রোগ:
বাঁধাকপির বীজ বপনের পূর্বে ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার গরম পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বীজ শোধন করে নেয়া। ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে নিয়মিত এবং অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
চারা ধ্বসা রোগ:
বাঁধাকপির এ রোগ প্রতিরোধ করতে হলে ১০০ থেকে ১২৫ কেজি প্রতি একর হারে সরিষা খৈল প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যায়। ঢলে পড়া চারা দেখা মাত্রই তুলে তা ধ্বংস করতে হবে।পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ও পরিমিত ইউরিয়া ব্যবহার করা। জমি সবসময় আর্দ্র বা ভিজা না রাখা এবং পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখা।
পাতায় দাগ পড়া রোগ:
বাঁধাকপির এ রোগের প্রতিকারের জন্য সুষম সার ও সেচের ব্যবস্থা ও সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপণ করতে হবে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় স্কোর ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ৫ এমএল হারে ২ সপ্তাহ পরপর স্প্রে করতে হবে।
কাটুই পোকা:
কাটুই পোকার আক্রমণে একর প্রতি ৩০০ এমএল, প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ এমএল ক্যারাটে মিশিয়ে সারির উপর দিয়ে গাছের গোড়া বরাবর ভালোভাবে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। স্প্রে শেষে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
লেদা পোকা:
যদি সম্ভব হয় তাহলে হাত দ্বারা কীড়া ও ডিম সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। ভলিয়াম ফ্লেক্সি ৩০০ এসসি প্রতি লিটার পানিতে ৫ এমএল হারে মিশিয়ে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বাঁধাকপির সরুই পোকা:
বাঁধাকপির ফসল সংগ্রহের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা এবং পরে জমি ভালো করে চাষ করা। কীড়া এবং ডিম সম্ভব হলে হাত দিয়ে পিষে মারা। প্রোক্লেম ৫ এসজি-১ গ্রাম প্রতিলিটার লিটার পানিতে প্রয়োজনীয় পানির সাথে আনুপাতিক হারে প্রোক্লেম মিশিয়ে ভালোভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে এবং প্রয়োজনে ৫ থেকে ৭ দিন পরপর স্প্রে করে দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন :
চারা রোপণের ৬০-৯০ দিন পর বাঁধাকপি সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি বাঁধাকপি গড়ে ২.৫ কেজি হয়। ফলন এক শতকে ১৫০-১৮০ কেজি, হেক্টরে ৭৫-৮০ টন, প্রভাতী জাতের ফলন ১১০-১১০ টন/হেক্টর।