অর্কিড এক অতি জনপ্রিয় ফুল | এক অনিন্দ সুন্দর ফুল হিসেবে এর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। বলা হয়, ফুল উৎপাদনোক্ষম উদ্ভিদ জগতে অর্কিড একটি বিশাল পরিবার, যার প্রায় ৯০০ গণ এবং ৩০,০০০ এরও অধিক প্রজাতি রয়েছে। ফুলটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আকর্ষণীয় রঙ, বিভিন্ন ধরনের গড়ন, সুগন্ধ, ঔষধি গুণাগুণ, দীর্ঘ স্থায়িত্বকাল।
অর্কিড ফুল চাষের জমি নির্বাচন:
অর্কিড ফুল চাষের ক্ষেত্রে ছায়াযুক্ত সুনিষ্কাশিত এবং স্যাঁতস্যাঁতে জমি চাষ করা উচিৎ। এছাড়াও অর্কিড ফুল চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ মাটি খুবই উত্তম। কারণ, এই ধরণের জমিতে অর্কিড ফুলের ভালো ফলন হয়। কিন্তু প্রখর সূর্যালোকে এই অর্কিড ফুলের ভালো হয় না। তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই অর্কিড ফুল চাষের ক্ষেত্রে জমিতে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে তবে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়াও বাড়িতে সেীন্দর্য বৃদ্ধির জন্য টবে এই ফুল চাষ করা যেতে পারে তবে সেক্ষেত্রে বড় গাছের নিচে এ ফুলের চাষ করা উত্তম। আর অর্কিড ফুল চাষের জমি বা বেড তৈরী করতে হবে গোবর বা কম্পোস্ট সার, নারিকেলের ছোবড়া, ধানের তুষ ও বেলে দো-আঁশ মাটির সমপরিমাণ মিশ্রণের সাহায্যে।
অর্কিড ফুলের চারা বা সাকার সংগ্রহ:
ফলনশীল অর্কিড গাছের ফুল কাটার পর সেই গাছ থেকে পার্শ্বীয়ভাবে কিছু সাকার বের হয়। এই সাকারগুলো গাছে থাকা অবস্থায় সেখান থেকেেএই অর্কিড গাছের শিকড় বের হয়। আর শিকড় বেড় হওয়ার সাথে সাথে সেই মিকড়গুলো গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন বা সংগ্রহ করে মূল চাষের জমিতে রেপন করে দিতে হবে। এছাড়াও অর্কিড গাছ থেকে কেটে ফেলা ফ্লাওয়ার স্টিকের ফুল শেষ হয়ে গেলে সেই স্টিক থেকে চারা উৎপাদন করে রোপন করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন।
অর্কিড ফুলের চার রোপণ পদ্ধতি:
অর্কিড ফুলের সাকার লাগানোর সময় সাকারগুলো সারি করে রোপন করতে হবে। আর এমনভাবে অর্কিড ফুলের সাকার বা চারাগুলো রোপন করতে হবে যেন এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার হয় এবং চাষের জমিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। অর্কিড ফুলের চাষের জমিতে সাকার লাগানোর সময় একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, সেটা হলো অর্কিড ফুলের গাছের শেকড়গুলো যেন পুরোপুরি মাটির নিচে থাকে।
অর্কিড ফুলের গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
যদিও এই অর্কিড ফুল চাষের জন্য তেমন বিশেষ সারের প্রয়োজন হয় না, তবে জমি তৈরীর সময় ফুলের ফলন ভালো হওয়ার জন্য জমিতে জৈব সার দিতে পারেন। কিন্তু অর্কিড ফুলের গাছের জন্য ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সমৃদ্ধ মিশ্র সার খুবই উপযোগী। তাই এই সারগুলো পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে সপ্তাহে এক বা দুই দিন গাছে স্প্রে করতে হবে। আর স্প্রে করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের পাতাগুলে ভালোভাবে ভিজে যায়।
অর্কিড ফুল চাষের জমিতে পানি নিষ্কাশন:
অর্কিড ফুল চাষের জমির মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকলেও অর্কিড গাছ লাগানোর পরও মাঝে মাঝে হালকা সেচ দিতে হয়, যাতে এই গাছের সাকারগুলো মাটিতে ভালোভাবে মিশে যায়। তাবে পরবর্তীতে আবহাওয়া অনুযায়ী এবং মাটির অবস্থা বুঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। যদিও এই ফুল চাষের জন্য অনেক পানির প্রয়োজন হয়, তবে তা মাটি ও আবহাওয়া অনুযায়ী কিন্তু এই ফুলের গাছের গোড়ায় কোনভাবে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। আর মাঝে মাঝে এই অর্কিড ফুলের গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।
অর্কিড ফুল চাষের ক্ষেত্রে রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা:
এই অর্কিড ফুলটিতে সাধারণত কোনো ধরণের রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে কোনভাবে এই অর্কিড গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেই ভাইরাসে আক্রান্ত গাছটি তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও মাঝে এই অর্কিড ফুলে কুঁড়ির কীড়া পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আর এই পোকা দমনের জন্য যেকোনো সিস্টেমিক বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় গাছে ব্যবহার করতে হবে।
অর্কিড ফুল ফোটার সময়:
সাধারণত অর্কিড ফুল গাছের সাকার থেকে এই গাছ লাগানোর ১ বছরের মধ্যেই এই গাছে ফুল আসে বা ফুল ফুটতে শুরু করে। মূলত এই অর্কিড ফুল আসার বা ফোটার সময় ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাস। অন্যদিকে টিস্যু কালচার বা নার্সারি থেকে পাওয়া এই অর্কিড গাছের চারা থেকে ফুল ফুটতে কমপক্ষে ১৮ মাস সময় লাগে।
অর্কিড ফুল কাটা বা ফুল উত্তোলন:
অর্কিড ফুল বাণিজ্যিক চাষের ক্ষেত্রে এই ফুলের স্টিকে এক বা দুটি ফুল ফোটার সাথে সাথে কাটতে হবে। তবে বাগানে বা টবে সৌখিনভাবে চাষের ক্ষেত্রে এই ফুল কাটার কোনো প্রয়োজন নেই। আর এভাবে রাখলে গাছে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত অর্কিড ফুল টিকে থাকে।